অনলাইন ডেস্ক:
পদ্মার শিমুলিয়া ঘাটে কৃষক জলিল মিয়া প্রতি পিস ডেউয়া ফল বিক্রি করছিলেন ১৫ টাকা করে, পেঁপে প্রতি পিস ৬০ টাকা, ঢেড়সের কেজি ৩০ টাকা। অথচ যেসব পণ্য তিনি বিক্রি করছিলেন ঢাকার বাজারে তার অনেক বেশি।
শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকা থেকে ঢাকায় সরাসরি কোনো বাস-ট্রাক না যাওয়ার কারণে পণ্যের নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন বলে জানান শরীয়তপুরের পদ্মাপাড়ের কৃষক জলিল মিয়া। তিনি পদ্মা পার হয়ে ঘাট এলাকায় নিজের জমির ফল ও সবজি নিয়ে বসেছিলেন বিক্রি করতে।
কৃষক জলিল মিয়া বলেন, ঢাকায় সবজি নিয়ে যেতে পারি না। যোগাযোগ-ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ঢাকার পাইকারেরাও এখানে আসেন না। ফলে বাধ্য হয়ে পদ্মা পারে বিক্রি করছি। পদ্মা সেতু চালু হলে কৃষিপণ্য বিক্রিতে ঢাকার বাজার ধরতে পারবো।
নিজের গাছের ছফেদা বিক্রি করছিলেন জসিম হোসেন নামের এক তরুণ। তিনি ছফেদা ১০ টাকা দরে প্রতিপিস বিক্রি করছিলেন।
তিনি বলেন, মাঝিকান্দি এলাকা থেকে ছফেদা বিক্রি করতে পদ্মা পার হয়ে এ ঘাটে আসতে হয়েছে কিন্তু সেতু চালু হলে আমরা ঢাকায় গিয়ে বিক্রি করে ফিরে আসতে পারবো। লাভও বেশি হবে।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক গোলাম রসুল বলেন, পদ্মা-মেঘনা নদীবেষ্টিত শরীয়তপুরের মাটি বেশ উর্বর। ফসলের ফলন ভালো হয় এ জেলায়। কেবল যোগাযোগ-ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকেরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতেন। পদ্মা সেতু চালু হলে এ অঞ্চলের কৃষকের ভাগ্য খুলে যাবে।
পরিবহন খরচ কমাতে মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও ফরিদপুরের অধিকাংশ পশু ব্যবসায়ী ট্রলারে পশু নিয়ে রাজধানীতে আসেন।
অন্যদিকে যশোর, মাগুরা, সাতক্ষীরা, নড়াইল ও ঝিনাইদহের ব্যবসায়ীরাও ট্রাকে করে গবাদিপশু ঢাকায় আনেন। পদ্মা পার হতে এসব ট্রাকের জন্য এতদিন ফেরিই ছিল ভরসা। বিড়ম্বনার সঙ্গে যুক্ত হতো বাড়তি খরচ।
আবার ব্যবসায়ীরা অতঙ্কে থাকতেন, অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডায় পশু আবার অসুস্থ হয়ে না যায়। অনেক সময় ফেরিঘাটে অসুস্থ গরু জবাই করে কম দামে মাংস বিক্রির নজিরও রয়েছে।
এ বছর পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রাক পার হবে বলে খুব একটা টেনশনে নেই বলে জানালেন গরু ব্যবসায়ীরা।
ঢাকায় গরু নিয়ে যেতে ঘাটে অপেক্ষা করছিলেন যশোর থেকে পশু বিক্রি করতে আসা খামারি মাসুদ হোসেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ফেরিঘাটের বিড়ম্বনা কমবে। আগে একটি ট্রাকে ২০টি গরু আনতে খরচ হতো ১৪-১৮ হাজার টাকা। এখন হয় ২২-২৫ হাজার টাকা। পদ্মা সেতু চালু হলে কম দামে ট্রাক পাওয়া যাবে কারণ ঘাটে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা তখন অপেক্ষা করতে হবে না।
সুস/এসবাংলা