অনলাইন ডেস্ক :
বাজারে পেঁয়াজের কেজিতে দাম বেড়েছে ৮-১০ টাকা। পাশাপাশি বেড়েছে ডিম ও আলুর দাম। তেল নিয়ে তেলেসমাতি তো চলছে রোজা থেকেই।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) সপ্তাহান্তে এই অবস্থা দেখা গেছে। এদিকে ঈদের পর হঠাৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম নতুন করে বেড়ে যাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করছেন ক্রেতা সাধারণ।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা আড়ৎ থেকে বেশি দামে কিনছেন তাই বেশি দামে বিক্রি করছেন। দাম কেন বাড়ল সেটা আড়তদার আর পাইকারি ব্যবসায়ীরাই ভালো বলতে পারবেন।
অপরদিকে আড়তদার এবং পাইকাররা বলছেন, হিলি বন্দরের আশপাশের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুত করে বেশি দামে বিক্রি করছে। এছাড়া সরকার নতুন করে পেঁয়াজ ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) না দেওয়ায় পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি আড়ৎ ও পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩২ থেকে ৩৪ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। অথচ তিন দিন আগেও খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দামে। মাত্র তিন দিনের মাথায় কেজি প্রতি খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা।
বাজার ঘুরে ক্রেতা, খুচরা এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে বলে ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের ভয় দেখাচ্ছেন। যার কারণে ভয়ে এবং বাধ্য হয়ে ক্রেতারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেঁয়াজ কিনছেন।
রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা মিজানুর বলেন, ‘গত সোমবার পেঁয়াজ কিনলাম ৩৫ টাকা কেজিতে। আজ দোকানি বলছেন, ৪৫ টাকা কেজি। আজ না নিলে কাল নাকি দাম আরও বাড়বে। তাই তিন কেজি কিনে নিলাম। তা না হলে এক কেজি কিনতাম।’
রাজধানীর নিউমার্কেটের খুচরা ব্যবসায়ী মতিন আহমেদ বলেন, ‘ভালো দেশি পেঁয়াজ আজ বিক্রি করছি ৪৫ টাকায়। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকায়। দুদিন আগেও এ পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৩০-৩৫ টাকায়।’ তিনি বলেন, ‘অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, আগামীকাল আরও বেশি দামে বেচতে হবে।’
পেঁয়াজের দাম বাড়াসহ সার্বিক অবস্থা নিয়ে নাম না প্রকাশ করার শর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রান্তিক কৃষকের কথা চিন্তা করে নতুন করে আপাতত পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন (আইপি) দেওয়া হচ্ছে না।’
পেঁয়াজ উৎপাদনে একজন কৃষকের যে খরচ হয়, সেই খরচ উঠিয়ে যেন কৃষকের হাতে কিছু টাকা আসে, সেই ভাবনায় নতুন করে পেঁয়াজ আমদানি না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে- বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এই কর্মকর্তার কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে অর্থনীতিবিদ মেহনাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানি না করার সরকারের এই সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। কারণ, এখন প্রান্তিক কৃষকদের হাতে আর পেঁয়াজ মজুত নেই। ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পেঁয়াজ কিনে নিয়েছেন। কম দামে কেনা পেঁয়াজ এখন বেশি দামে বিক্রি করার পাঁয়তারা করছেন তারা।’
তবে প্রান্তিক কৃষকদের ন্যায্যমূল্য দেওয়ার স্বদিচ্ছা থাকলে ভরা মৌসুমে কৃষদের কাছ থেকে সরকারিভাবে পেঁয়াজ কেনার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী সাদেক বলেন, ‘দুই দিন আগেও পেঁয়াজের পাল্লা বিক্রি করেছি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। আজ এক পাল্লা কেনাই পড়ছে ১৮০ টাকা। তাই, বিক্রি করেছি ২০০ টাকায়।’
হঠাৎ দাম বাড়ার কারণ হিসেবে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘ভারতের পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এসব কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। পেঁয়াজের বাজারে আগুন লেগেছে।’
পেঁয়াজের পাশাপাশি আলুর দামও এক সপ্তায় কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫ টাকা। গতকাল বুধবার (১১ মে) ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া আলু আজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। এছাড়া লেয়ার মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। যা তিনদিন আগেও ছিল ১০৫ টাকা ডজন। অর্থাৎ ডিমের দাম হালিপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে এখন ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এআর/এসবাংলা