নিজস্ব প্রতিবেদক :
ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জের ফুলজোড়, ইছামতী, হুরাসাগর, করতোয়াসহ অভ্যন্তরীন নদ-নদীর পানি বাড়ছে। পানি বাড়ার কারণে তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক ফসলি জমি ও নি¤œাঞ্চল। সেই সাথে ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ফলে আতঙ্কে রয়েছে নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোর মানুষেরা।
এদিকে, চৌহালী উপজেলায় ভাঙনরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী দাবি আদায়ের জন্য মানববন্ধন, সভা সমাবেশ কর্মসূচিও পালন করেছেন।
রবিবার (৪ অক্টোবর) সকালে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার কমে বর্তমানে বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার কমে বর্তমানে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
যমুনার ভাঙ্গনে জেলার চৌহালী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম। বিলুপ্তির পথে রয়েছে আরও ৮টি গ্রাম। ইতোমধ্যে এসব গ্রামের পাঁচ শতাধিক বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি ও স্থাপনা নদীগর্ভে চলে গেছে, হুমকির মুখে রয়েছে আরও পাঁচ শতাধিক বাড়ি-ঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বাড়ি-ঘর হারিয়ে মানুষগুলো ওয়াপদার ওপর আশ্রয় নিয়েছেন।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ কয়েক বছরের ভাঙনে চৌহালী উপজেলার মানচিত্র থেকে ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে ১৫টি গ্রাম। খাস পুখুরিয়া, বাঘুটিয়া, ঘোরজান, স্থল ও উমারপুর ইউনিয়নের এসব গ্রামগুলো হলো, মিটুয়ানি, আরমাশুকা, বীরমাশুকা, বীরবাউনিয়া, খাসপুখুরিয়া, বাঘুটিয়া, সম্ভুদিয়া, চৌবাড়িয়া, হাপানিয়া, চর সলিমাবাদ পশ্চিমপাড়া, হাটাইল, কাশেমগঞ্জ, দত্তকান্দি, পয়লা, হিজুলিয়া।
বর্তমানে ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে-খাষপুখুরিয়া উত্তর, খাষপুখুরিয়া দক্ষিণ, রেহাই পুখুরিয়া, চরনাকালিয়া, চরবিনানই, চরসলিমাবাদ, ভুতের মোড়সহ প্রায় ৮টি গ্রাম। এসব গ্রামের পাঁচ শতাধিক বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে চলে গেছে।
এহিয়া খান, সেলিম হোসেন, সালাউদ্দিন জানান, দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় কমবেশি ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনে ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও ফসলি জমি, শিক্ষা ও ধর্মী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনাও বিলীন হয়েছে। এখনো ভাঙন অব্যাহত থাকায় আতঙ্কে মানুষ বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছে।
বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাহার সিদ্দিকী বলেন, এই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ভাঙন চলছে প্রায় এক যুগ ধরে। এ বছর এই ভাঙ্গনের মাত্রা অনেক বেশি। এখন পর্যন্ত ভাঙনরোধে কার্যকরি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। নিরূপায় হয়ে নদী তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষগুলো আন্দোলনে নেমেছে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (চৌহালী অংশের দায়িত্বে) সিরাজুল ইসলাম জানান, ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলেই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। বর্তমানে ভাঙন রোধে ওই এলাকায় জিও বালুর বস্তা ফেলার কাজ চলছে।