নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের স্বনামধণ্য মানুষদের সাথে ছবি উঠে তা ফেসবুকে আপলোড করে নিজেকে তাদের কাছের মানুষ বলে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে প্রতারনা করতো জেমি।
সে কখনো প্রধান মন্ত্রীর পালিত মেয়ে, কখনো আ’লীগের সাধারণ সম্পাদকের বন্ধু আবার কখনো বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছের মানুষ পরিচয় দিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষকে প্রতারিত করতেই চলছিলো এই আটক জেমি পারভীনের কর্মকান্ড। জেমির আটকের খবরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলার ভুক্তভোগীরা।
আটক জেমি পারভীন শাহজাদপুর উপজেলার তালগাছি এলাকার মাকড়কোলা বাজারঘাটি গ্রামের সন্দেশ বিক্রেতা মোকসেদ প্রামানিকের মেয়ে।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, ছোটবেলায় শাহজাদপুর উপজেলার তালগাছি স্কুলে বাবার সাথে সন্দেশ বিক্রি করতো নবিয়া। সে কখনো কখনো গানও করতেন। তালগাছিসহ আশপাশের এলাকায় এখনো জেমি পারভিন সন্দেশ ওয়ালার মেয়ে নবিয়া নামেই পরিচিত। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথেই নবিয়া হয়ে যায় জেমি পারভিন। আর এর মাঝে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন অন্তত ৪ বার। সবশেষে জেমি আস্তানা গাড়েন ঢাকায়। গান নিয়ে হাজির হন আওয়ামীলীগের বিভিন্ন বড় বড় অনুষ্ঠানে। নিজের চাতুড়তায় সখ্যতা বাড়ান আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বড় বড় নেতাদের সাথেও। তাদের সাথে ছবি তুলে ফেসুবকে আপলোড দিয়ে নিজেই নিজেকে প্রচার করেন আওয়ামীলীগের নারী নেত্রী হিসেবে। নিজেকে অনেক শক্তিশালী ভেবে নিজের ফেসবুক ওয়ালে প্রচার করেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দের নামে নানা কটুক্তি।
গত (৬ সেপ্টেম্বর) রবিবার ঢাকার তেজগাঁও থানার একটি মামলায় সাইবার এ্যান্ড স্পেশাল বিভাগ তাকে গ্রেফতারের পরই তার নিজ এলাকার ভূক্তভোগীরা মুখ খুলতে শুরু করে।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী গাড়াদহ সরকারী প্রাথামিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আয়নুল হক, বাবুল আক্তার, রতন মিয়া, মানিক চাঁদ ও এ্যাড. বদিউল আলমসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, জেমির কথামতো না চললে স্থানীয় সাধারণ মানুষকে পড়তে হতো নানা ধরণের মামলায়। মিথ্যা ধর্ষণ মামলাসহ হত্যা চেষ্টা ও অপহরণের মামলা হতো সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে। আর পরবর্তিতে মামলা নিষ্পত্তির নামে অভিযুক্তদের কাছ থেকে নিতেন বিপুল পরিমান টাকা। সেই টাকাতেই ঢাকাসহ উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুরে গড়ে তুলেছেন অন্তত ৪টি বাড়ি।
স্বরাষ্ট মন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীদের সাথে তোলা ছবি দেখিয়ে থানার কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করতেন। জেমি আটকের খবরে শাহজাদপুর-উল্লাপাড়ার ভুক্তভোগীরা স্বস্তির নি:স্বাস ফেলেছে। ভুক্তভোগীরা আরোও জানান, টাকা চাই না এই প্রতারকের হাত থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
জেমির মা সোনাভান খাতুন জানান, আমার মেয়ে কোন অপরাধ করেনি। নিরাপরাধ দাবি করে বলেন আমার মেয়ের ঢাকায় কোনো বাড়ি নেই।
এ ব্যাপারে গাড়দহ ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, স্থানীয়ভাবে এর আগে জেমিকে নিয়ে বেশ কয়েকটি সালিশ বৈঠক হয়েছে। তবে জেমির অধিকাংশ অভিযোগই মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। থানায় দায়ের করা মামলাগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলেও জানান।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. হাসিবুল আলম জানান, জেমি পারভিনের বিগত সময়ের রেকর্ড যাচাই বাছাই চলছে। তবে তার বিরুদ্ধ এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।