নিজস্ব প্রতিবেদক :
অল্প সময়ের ব্যবধানে শুণ্য থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা হেদায়েতুল আলমের অবৈধ সম্পদের হিসাব চেয়ে তলব করেছে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সম্মনিত জেলা কার্যালয় পাবনার সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি পত্র ২ সেপ্টেম্বর ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। চিঠিতে ৮ সেপ্টেম্বর তাকে সম্মনিত জেলা কার্যালয় পাবনায় হাজির হতে বলা হয়েছে।
দুদক সম্মনিত জেলা কার্যালয় পাবনার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, হাটিকুমরুল ইউপি চেয়ারম্যান হেদায়েতুল আলমের অবৈধ সম্পদ অর্জণের বিষয়ে সম্প্রতি টিভি, পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার হয়েছে। সেই সংবাদের সূত্রধরে দুদক ঢাকা প্রধান কার্যালয় চেয়ারম্যানের সম্পদের হিসাব অনুসন্ধানে দুদক সম্মনিত জেলা কার্যালয় পাবনাকে তদন্ত করার নির্দেশ প্রদান করেছে। সেই মোতাবেক তাকে তলব করা হয়েছে।
চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার হাটিকুমরুল ইউপি চেয়ারম্যান হেদায়েতুল আলম সোমবার দুপুরে জানান, আমি কোন অবৈধ সম্পদ অর্জণ করিনি। গাড়ি, বাড়ি, বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ আমার যা সম্পদ আছে সবই বৈধ। আমার কোন অবৈধ সম্পদ নেই। সব কিছুর আয়কর ও ভ্যাট দেয়া আছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু অভিযোগ দিলে তো হবে না, সেটার সত্যতাও থাকতে হবে। দুদক আমার সম্পদের হিসাব চেয়েছে, আমিও হিসাব দেব, সব রেডি আছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের চড়িয়াশিকা গ্রামের মোকছেদ আলীর মধ্যবিত্ত পরিবারে হেদায়েতুল আলমের জন্ম। টানা ৭ বছর সলঙ্গা থানা যুবলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর ২০১১ সালে সে প্রথম হাটিকুমরুল ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর দলীয় প্রতিক নৌকার পেয়ে সে ২০২৬ সালে আবারও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথমবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দলীয় প্রভাব আর চেয়ারম্যানের ক্ষমতার দাপটে অর্জিত টাকায় সে এখন বিলাসবহুল বাড়ি, সুপার মার্কেট, উন্নত মানের গাড়ি, জায়গা-জমির মালিক। তার নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মারপিটে ও হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন নিজ দলের অনেক নেতাকর্মী। আবার নিজের পাল্লা ভারি করতে জামায়াত-বিএনপি থেকে লোকজনকে নিজ দলে বেড়ানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে সলঙ্গা থানা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক আরাফাত জানান, ইউপি চেয়ারম্যান হেদায়েতুল আলম চড়িয়াশিকায় ৩ বিঘা জমির উপরে নির্মান করেছেন ২ তলা একটি বিলাসবহুল বাড়ি। যার প্রতিটি রুম এসি করা, প্রতিটি রুমে রয়েছে দেড় লাখ টাকা মূল্যের একেকটি টিভি মনিটর, প্রতিটি জানালার পর্দার জানালার দাম ৮০ হাজার টাকা। ২য় তলার ৬টি রুমে হাতিলের তৈরী প্রায় ৯০ লাখ টাকার নামীদামী ফার্নিচার রয়েছে। সাথে আছে দামী কমোট ও বেসিং।
তিনি আরও বলেন, হাটিকুমরুল গোলচত্বরের উত্তর পাশে ১৬ শতক জায়গার উপর নির্মান করছেন বিশাল ৫ তলা ভবন। নিজের ব্যবহৃত প্রাইভেটকারের দাম ৪৮ লাখ টাকা। স্ত্রীর রয়েছে প্রায় ২০০ ভরি ওজনের সোনার গহনা। এছাড়াও ব্যস্ততম সিরাজগঞ্জ রোড গোলচত্বরের নিয়ন্ত্রনও তার হাতে রয়েছে। এখানকার পরিবহন ব্যবসার নিয়ন্ত্রন, চেইন মাস্টার নিয়োগ ও দোকানপাট বসিয়ে টাকা আদায় তিনিই করেন। মৎস্য আড়তের নিয়ন্ত্রনও তার হাতেই। সেখানে বরফ বিক্রির কমিশন বাবদ তার আয় হয় প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা। এলাকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রনও তার হাতে। টাকা না পেলে কোন দেনবার করে না চেয়ারম্যান আলম।
এ বিষয়ে সলঙ্গা থানা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক আব্দুল মান্নান অভিযোগ করে বলেন, চেয়ারম্যান নিজের অবস্থান শক্ত করার জন্য গত ৮/১০ বছরে প্রায় ১৪জনকে জামায়াত-বিএনপি থেকে এনে আওয়ামীলীগসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পদে বসিয়েছেন। তার নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এসময় গুলোতে আমি ছাড়াও অন্তত: ১৫জন নেতাকর্মী নিজ দলের মারপিট ও হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। এসবের প্রতিবাদ করতে পারি কিন্ত চেয়ারম্যান এমপি সাহেবের নাম ভাঙ্গিয়ে সব কিছু করে তাই কুলিয়ে উঠতে পারেন না বলে জানান, এই আওয়ামীলীগ নেতা।