সিরাজগঞ্জ ॥
উজানের পানি কমতে থাকায় সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন পয়েন্টে যমুনার পানি এখন বিপদসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমতে শুরু করায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বাঁধ ও উচুঁস্থানে আশ্রয় নেওয়া মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তবে বন্যার পানি কমতে শুরু হলেও পানিবাহিত রোগ ও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
মঙ্গলবার (১১ আগষ্ট) সকালে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টের বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ও কাজিপুর পয়েন্টের বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটিার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যানবিদ এসএম হুমায়ুন কবীর জানান, গত পহেলা জুলাই থেকে জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। তখন থেকে জেলার বন্যা উপদ্রুত ৬টি উপজেলায় ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানায় শিশু ও নারীসহ ৭৩৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
এ ছাড়া চোখের পর্দাহে ৯৬ জন ও চর্মরোগে ১৪৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। শারীরিক আঘাত প্রাপ্ত হয়েছেন ১১ জন এবং বন্যাজনিত বিভিন্ন রোগে আরো ১৫৭ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি আরো জানান, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত জেলায় পানিতে ডুবে মারা গেছেন ২৭ জন এবং সাপের কামড়ে মারা গেছেন ৮ জন।
সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনবাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, বন্যার সময় শিশুরা পানিতে ছোটাছুটি করায় খোস-পচড়া ও পচারিসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। চলমান বন্যায় জেলার ৬ উপজেলার শিশু ও নারীসহ প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যমুনার পানি গত কয়েক দিন থেকে কমতে শুরু করলেও বন্যার পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী আগস্ট মাসে আরেক দফা বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরো জানান, জেলার বন্যা উপদ্রুত উপজেলাগুলোতে শুরু থেকেই ৯৩টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। এ ছাড়া সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার জন্য ভ্যাকসিন ‘এন্টিভেনম’ ইতোমধ্যে জেনারেল হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, বন্যাজনিত কারণে পানি বাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। বন্যার সময় শিশুরাই সাধারণত সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। বিশেষ করে যারা সাঁতার না জানে, তারা খেলতে গিয়ে পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়। এ ছাড়া যে শিশুরা যারা সাঁতার জানে বন্যার পচা ও বদ্ধ পানিতে ভেলা নিয়ে খেলাধুলা করা ও কাঁদা জলে ছোটাছুটি করায় পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হয় তারা। এ ছাড়া বড়রা বন্যার পচা ও বদ্ধ পানি ও কাঁদাতে হাটাচলা করায় তারাও পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।