নিজস্ব প্রতিবেদক :
সিরাজগঞ্জে আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় হত্যা মামলার বাদীকে অপহরণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় কামারখন্দ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ রেজা পাভেল ও সাধারন সম্পাদক মামুন সেখকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে, মামলা করতে গেলে থানার ওসির রুমেই নিহত বিজয়ের বাবা ও তার বড় ভাইকে প্রতিপক্ষরা মারপিট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কামারখন্দ থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, আজ মঙ্গলবার বিকেলে বিজয় হত্যা মামলার বাদী রুবেলের বাবা আব্দুল কাদের প্রমানিক বাদী হয়ে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৬জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামী করা হয়েছে। মামলা হওয়ার পরই থানা এলাকা থেকেই এজাহারভুক্ত আসামী পারভেজ রেজা পাভেল ও মামুন সেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। সন্ধ্যায় তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ৩ আগষ্ট বিজয় হত্যা মামলার বাদী নিহতের বড় ভাই রুবেলকে কামারখন্দ বাজার এলাকা থেকে মাইক্রোবাসে করে অপহরণ করা হয়। এরপর বিজয় হত্যা মামলা তুলে নিতে এবং নিহত বিজয়ের ব্যবহৃত মোবাইল ও মেমোরী কার্ডের জন্য চাপ দেয় অপহরণকারীরা। একপর্যায়ে তার চিৎকারে বেকায়দায় পড়ে গিয়ে অপহরণকারীরা তাকে বগুড়ার মাঝিরা ক্যান্টরমেন্ট এলাকায় মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দেয়। পরে স্থানীয় একটি মসজিদের মুসুল্লীরা তাকে অসুস্থ্য অবস্থায় পায়। সেখান থেকে শাহজাহানপুর থানা পুলিশ তাকে উদ্ধারের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।
এদিকে, কামারখন্দ থানায় মামলা করতে গেলে থানা ওসির রুমেই নিহত বিজয়ের বাবা ও তার বড় ভাইকে প্রতিপক্ষরা মারপিট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিহত বিজয়ের ভাই রুবেল প্রমানিক জানান, বিকেল ৩টার দিকে আমরা মামলা করা জন্য থানায় দিকে যাচ্ছিলাম। বিষয়টি টের পেয়ে পাভেলসহ ৩জন আমাদের পিছু নেয়। আমরা দ্রুত থানায় ঢুকে ওসি সাহেবের রুমে আশ্রয় নেই। বিষয়টি জানানোর পর ওসি সাহেব থানার ভিতর থেকেই পাভেলকে আটক করে।
তাকে আটকের সংবাদ পেয়ে আওয়ামীলীগসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী থানায় চলে আসে। তাদের মধ্যে কায়েকজন ওসির রুমের মধ্যেই আমাকে ও বাবাকে মারপিট করে এবং সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া চেষ্টা করে। ওই সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য ওসি সাহেব তার রুমের বাইরে ছিলেন। ফিরে এসে রুমের ঘটনা দেখতে পেয়ে তাদের রুম থেকে বের দেন। এ সময় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী থানার বাইরে ও ভিতরে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ অবস্থায় পুলিশী নিরাপত্তায় আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, যে কোন সময় মামলার আসামী ও তার সমর্থকরা আমাদের বাড়িতেও হামলা করতে পারে বলে আমরা আশংকা করছি।
এ বিষয়ে কামারখন্দ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিনুর কবির জানান, সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষনিক থানায় গিয়েছিলাম। থানার বাইরে পাভেলের সমর্থক নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করলেও তারা থানার ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনি। ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করায় মামুন সেখ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে অপহরণ মামলার প্রধান আসামী।
ওসির রুমের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, সেটি ওসি ভাল বলতে পারবে। আমি কিছু জানি না। বিক্ষোভ থামাতে টিয়ারসেল ও শর্টগানের গুলি করা হয়ে বলে স্থানীয় ভাবে জানা গেলেও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তা স্বীকার করেননি।
এ বিষয়ে কামারখন্দ থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার রুমের ভিতরের বিষয়ে বাদী পক্ষের করা অভিযোগ সত্য নয়।
প্রসঙ্গত, ২৬ জুন জাতীয় নেতা সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে যাওয়ার পথে শহরের বাজার ষ্টেশন এলাকায় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও কামারখন্দ সরকারী হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি এনামুল হক বিজয়কে মাথায় কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। ৯ দিন পর ৫ জুলাই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বড় ভাই রুবেল বাদী হয়ে ছাত্রলীগের ৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বর্তমানে ৩জন জেলহাজতে রয়েছে।
এ অবস্থায় নিহত ছাত্রনেতা বিজয় স্মরণে মিলাদ মাহফিলকে কেন্দ্র করে ৭জুন ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে উভয়গ্রুপে অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরাও যুক্ত হন। এসব ঘটনায় পাল্লাপাল্টি আরও ৪টি মামলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপে ৮ জুলাই থেকে জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয় তালা বন্ধ এবং সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের দলীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশ বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছেন।