নিজস্ব প্রতিবেদক :
সিরাজগঞ্জে ৩৫ হাজার পরিবারের প্রায় পৌনে দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাঁধের দু’ধারে ছুঁই ছুঁই পানি, পানির উপর মাথা উঁচু করে আছে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ। সেই বাঁধের উপরে ঠাঁই নিয়েছে বন্যাকবলিত মানুষেরা।
গবাদি পশুর সঙ্গে গাদা-গাদি করে বেঁচে থাকা জীবনে এখন আর কারো করুণা চান না তারা, খাদ্যের আগে চাচ্ছেন সম্ভ্রম রক্ষার নিশ্চয়তা। পরিবারের নারী ও মেয়েরা বিশুদ্ধ পানি ও শৌচাগার পেলেই যেন আপাত বর্তে যাবেন বাঁধগুলোতে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো।
শুক্রবার (১৭ জুলাই) সকালে সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউপি’র সিকদার বাড়ী বাঁধে দিনমজুর শ্রেণির এই পরিবারগুলোতে এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি। বর্তমানে ঘরে পালিত হাঁস-মুরগিসহ গবাদি পশু বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন বলে জানান কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলো। বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটে বন্যাকালীন সময়টি কিভাবে কাটবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন পানি বন্ধি মানুষগুলো।
যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার, পাঁচ ঠাকুরী, সিমলা, শিকদারবাড়ী, রানিগ্রাম, সয়দাবাদ পূর্ণবাসনের ওয়াপদা বাঁধের ওপর মানবেতর জীবনযাপন করছেন বানভাসি মানুষেরা। বাঁধে শতাধিক মানুষের আশ্রয় হলেও নেই বিশুদ্ধ পানি ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা। বিভিন্ন বাঁধের ওপর অস্থায়ী একচালা ঘর তুলে আছেন জেলার ৪০টি ইউনিয়নের পানিবন্ধিরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারি কোনও সাহায্য পাননি বলেও অভিযোগ করেছেন বাধে আশ্রিতরা।
শিকদার বাড়ী ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নেওয়া আব্দুল হালিম (৫৫) বলেন, আমার ৫ সদস্যের পরিবার। তাদের নিয়ে ১৫ দিনের মতো ওয়াবদা বাঁধটির উপর একটি খোলা ঘরে আছি। কোথাও যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। তাই বাঁধের উপর আপাতত আছি। কোনও ত্রাণ পাইনি। মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে যা পাই তা দিয়ে কোনো রকম সংসার চালানোর চেষ্টা করছি।
একই এলাকার আশরাফ আলী বলেন, গবাদি পশুর জন্য খড় কেনার টাকা-পয়সা নেই। তাই অন্যের বাঁশঝাড় থেকে পাতা কেটে এনে খাওয়াচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ৫টি গরু, ৩টি ছাগল নিয়ে ১০দিন হলো বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। গরু-ছাগলের ঘাস খাওয়ানোর মতো কোন জায়গা নেই। সব জায়গাতেই শুধু পানি আর পানি।
খোকশাবাড়ী ইউপি সদস্য মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, বাঁধে আশ্রিত প্রায় শতাধিক মানুষ। কিন্তু সরকারী বরাদ্দ পাওয়া যায় ১০ জনের। বাকিগুলোর চাহিদা মিটানো সম্বব হচ্ছে না। সরকারী বরাদ্দ পেলে বাকীদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশিদুল ইসলাম রশিদ মোল্লা জানান, বন্যাকবলিতদের জন্য সরকারী ভাবে কিছু বিশুদ্ধ পানি ও শোচাগারের বরাদ্দ পেয়েছি। দ্রুত বিভিন্ন স্থানে পানিবন্দিদের মাঝে স্থাপন করা হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, পানিবন্ধিদের জন্য ৪০০ টন চাল, দুই লাখ টাকার শিশু খাদ্য, দুই লাখ টাকার গো-খাদ্য ও চার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যেই জেলার বন্যাদুর্গত এলাকার জন্য ১৪২ টন চাল এবং দুই লাখ ৫৪ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ১৭৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে দুর্গতদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে নিজ নিজ উপজেলা কমিটিকে জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।