নিজস্ব প্রতিবেদক :
সিরাজগঞ্জে দলীয় কোন্দলের কারণে প্রতিপক্ষের মারপিটে নিহত ছাত্রনেতা এনামুল হক বিজয় স্মরণে মিলাদ মাহফিলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি আরও ২টি মামলা হয়েছে।
মামলায় নামীয় ও অজ্ঞাত মিলে ৩৫০জনকে আসামী করা হয়েছে। এ নিয়ে ওই সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার সংখ্যা দাঁড়ালো ৪টিতে। এছাড়াও এই সংঘর্ষের কারণে দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়ায় আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপে বুধবার থেকে জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয় বন্ধ এবং আওয়ামীলীগের সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের দলীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
সদর থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, শনিবার জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হকের স্ত্রী মুক্তা খাতুন বাদী হয়ে তার স্বামীকে মারপিটের অভিযোগে এনে একটি মামলা করেছেন। মামলায় ৭৫ জনের নাম উল্লেখ্য এবং ১০০/১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। এর আগে সংঘর্ষে আহত গয়লার আহম্মেদ সেখের পক্ষে সিরাজগঞ্জ সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদ খান ৯ জুলাই বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। সেখানে ৮১জনের নাম উল্লেখ্য এবং ৩০/৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে।
এছাড়াও ঘটনার পরই জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহম্মেদ বাদী হয়ে পৃথক ২টি মামলা করেন। মামলা দুটিতে নামীয় ও অজ্ঞাত মিলে ২৮০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মামলা দুটির তদন্ত করছেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মোস্তফা এবং মুক্তা খাতুন ও রাশেদ খানের দায়ের করা মামলা দুটির তদন্ত করছেন থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নুরুল ইসলাম। এসব মামলায় এ পর্যন্ত ২৫জন গ্রেপ্তার হওয়ার পর জেলহাজতে রয়েছে।
মুক্তা খাতুনের দায়ের করা মামলার শীর্ষ পর্যায়ের আসামীরা হলেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ ইউসুফ জুয়েল, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক জিহাদ আল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ বিন আহম্মেদ, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান সোহেল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, সাবেক সভাপতি জাকিরুল ইসলাম লিমন, সদর উপজেলা মৎস্যজীবিলীগের আহবায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন মন্ডল, সয়দবাদ ইউপি সদস্য আব্দুল মোমিন ও পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ শাহাদত হোসেন প্রমুখ।
অপরদিকে, রাশেদ খানের দায়ের করা মামলার শীর্ষ পর্যায়ের আসামীরা হলেন, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র হেলাল উদ্দিন, তার ভাই সদর থানা আওয়ামীলীগ নেতা বেলাল হোসেন, সংঘর্ষে আহত জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসান হাবিব খোকা, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিম রেজা নুর দিপু, শহর যুবলীগের আহবায়ক এমদাদুল হক এমদাদ, ট্রাক মালিক গ্রুপের সভাপতি টি এম রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ ও শহর ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল মতিন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ৭জুন নিহত ছাত্রনেতা এনামুল হক বিজয় স্মরণে মিলাদ মাহফিলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষে অন্তত: ৪০ জন নেতাকর্মী আহত হয়। টানা দুই ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে উভয়গ্রুপে অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরাও যুক্ত হন। এর আগে ২৬ জুন জাতীয় নেতা প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে ছাত্রলীগ আয়োজিত দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে যাওয়ার পথে শহরের বাজার ষ্টেশন এলাকায় এনামুল হক বিজয়কে মাথায় কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। ৯ দিন লাইভ সাপোর্টে থাকার পর ৫ জুলাই সকালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার বড় ভাই রুবেল বাদী হয়ে ২৭ জুন জেলা ছাত্রলীগের ২ সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সংগঠনের ৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বর্তমানে ৩জন জেলহাজতে, একজন জামিনে এবং প্রধান আসামী পলাতক রয়েছে। ঘটনার পর ২৮ জুন মামলার আসামী জেলা ছাত্রলীগের ২ সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন ও শিহাব আহমেদ জিহাদকে দল থেকে সাময়িক বহিস্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। নিহত এনামুল জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও কামারখন্দ সরকারী হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন।