বিশেষ প্রতিনিধি :
গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তলিয়ে গেছে সিরাজগঞ্জের যমুনার চরাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্নের ফসল। চলতি মৌসুমে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করা কৃষকদের সেই স্বপ্ন এখন ভেস্তে গেছে নদীর পানি
বৃদ্ধি পাওয়ায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) জেলার চরাঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে চরের শত শত হেক্টর জমির পাট, তিল, বাদাম, ভুট্টা, আউশ, কাউন, আখ ও সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে থাকা এসব ফসল পচতে শুরু
করেছে। একারণেই পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই ফসল কাটতে শুরু করেছেন অনেক কৃষক। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে অন্যের জমি বর্গা ও চড়া সুদে টাকা নিয়ে চাষাবাদ করা চাষিরা। হঠাৎ নদীতে পানি আশায় কৃষকদের মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে উঠেছে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জে ৯৫৫ পাট, ৩৭১ তিল, ১০ ভুট্টা, ৫৫
আউশ, ২৩ সবজি, ১৭ কাউন, ৭৮ আখ মোট ১৫ শত ৯ হেক্টর জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এতে কৃষকের ৫০% ক্ষতি হবে।
সদর উপজেলার মেছড়া ইউনিয়নের কৃষক আমজাদ হোসেন (৫৫), আমিনুল ইসলাম (৪৫) ও মকবুল হোসেন বলেন, প্রতিবারের মতো আমরা চলতি মৌসুমে ৬ একর জমিতে পাট, তিল, আউশ চাষ করেছি। এক সপ্তাহের বৃষ্টিপাতে নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে আমাদের অধিকাংশ জমির ফসল।
ফসল এখনও পরিপূর্ণ হয়ে ওঠেনি। অপরিপূর্ণ ফসলগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উৎপাদন নিয়ে চিন্তিত। পানিতে তলিয়ে থাকা কিছু অংশের ফসল কাটতে শুরু করেছি। যা থেকে অর্ধেক পাটও উৎপাদন হবে কি-না তা নিয়েও সন্দেহ আছি।
সদর উপজেলার মেছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ (২য় পাতায় দেখুন)
জানান, যমুনায় হঠাৎ পানি বাড়ায় বেশ কিছু ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি দ্রুত নেমে না গেলে ফসল ঘরে তুলে নেওয়াও সম্ভব নয়। এর ওপর চলছে নদী ভাঙ্গন। চরাঞ্চলে মানুষ চরম বিপাকে দিনানিপাত করছে। আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেছি।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সরকার অসীম কুমার জানান, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের কাছে ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, দ্রুতগতিতে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকের ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। কিন্তু গত ২৪ ঘন্টায় নদীর পানি হ্রাস বা বৃদ্ধি পায়নি। তবে আশা করা যাচ্ছে পানি আর বৃদ্ধি পাবে না। দু-একদিনের মধ্যে হ্রাস পেতে পারে। প্রতিনিয়ত নদীর তলদেশে সার্ভে করছি। যাতে কোথাও কোনো ক্রটি থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে পারি। বাঁধগুলোর অবস্থা ভালো আছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, উপ-পরিচালক (ডিডি) মোঃ হাবিবুল ইসলাম জানান, বৃষ্টির পানিতে জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ৩০টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ১৫ শত ৯ হেক্টর জমি নি¤œজীত হয়েছে। ফসল বেশিদিন পানিতে থাকলে গোড়া পচে গাছ মরে যাবে। তবে দ্রুত পানি নেমে গেলে গাছ বেঁচে যাবে ও উৎপাদন স্বাভাবিক হবে। সার্বক্ষনিক কৃষি বিভাগ কৃষকদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।