নিজস্ব প্রতিবেদক :
কাউকে এখন আর ধান নিয়ে ছুটতে হয় না মিল বাড়িতে। মাথায় বহন করতে হয় না ধান বা চালের বস্তা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সব সমাধান করে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের মোবাইল ধান ভাঙ্গানো কলের মালিক আব্দুল জব্বার। কৃষক তথা গেরস্তের দোরগোড়ায় গিয়ে ধান ভেঙ্গে চাল তৈরি করে দিচ্ছেন তিনি।
সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে এই ভ্রাম্যমাণ ধান ভাঙ্গার কলের বিস্তার ঘটেছে। কৃষকের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ধান ভেঙ্গে চাল করে দেয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই ধান ভাঙ্গানোর কল।
ধান ভাঙ্গা আর পিঠা খাওয়ার জন্য চাল গুঁড়ো করতে ব্যবহৃত হতো ঢেঁকি। বর্তমানে পাঁচ গ্রাাম ঘুরেও একটি ঢেঁকির সন্ধান পাওয়া যাবে না। কষ্ট করে ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে চাল বানানোর পাশাপাশি এলো রাইচ মিল (চালকল)।
বিকট শব্দে ইঞ্জিনটি চালাতে লোক প্রয়োজন হতো ৫-৬ জনের। ওই মেশিনের শব্দ ৬-৭ মাইল দূর থেকেও শোনা যেত। ডিজেল দিয়ে চালাতে হতো ওইসব মেশিন। গ্রাম-গঞ্জে বিদ্যুতের প্রচলন হওয়ায় ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায় ওইসব রাইস মিল। এরপর বৈদ্যুতিক মোটরের মিল চালু হয়। অনেক দূরে দূরে রাইস মিল হওয়ায় মানুষকে খুব কষ্ট করে ধান ভাঙ্গাতে হয়। অনেক স্থানে বিদ্যুৎ না থাকায় শ্যালো মেশিনের সঙ্গে হলার স্থাপন করে ধান ভাঙ্গা মেশিন তৈরি করা হয়।
সোমবার (২২ জুন) সকালে উল্লাপাড়া উপজেলার শিবপুর গ্রামে দেখা যায় এই ভ্রাম্যমান ধান ভাঙ্গানো মেশিনটি। সেখানে ধান ভাঙ্গানো সিরিয়াল দিয়ে বসে আছেন অনেক নারী-পুরুষেরা।
শিবপুর গ্রামের গৃহবন্ধু পারভীন, আঞ্জুয়ারা, আলেয়া ও শেফালী বেগম বলেন, এখন আর ধান ভাঙ্গানোর সমস্যা নেই। যেতে হয় না আর বাজারে। মোবাইল করলেই বাড়ীতেই চলে আসে ভ্রাম্যমান ধান ভাঙ্গানো মেশিন। বাজারের চাইতে ভ্রাম্যমাণ কলে ধান ভাঙ্গালে আমাদের খরচ, কষ্ট ও সময় খুব কম লাগে।
ধান ভাঙ্গানো কলের মালিক আব্দুল জব্বার বলেন, তাঁতের কাজ করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কষ্টে সংসার চলতো। কষ্টকে বিদায় করে একটু ভালো ভাবে চলা ও সন্তানকে পড়া শোনার খরচের জন্য নিজেকে পরিবর্তন করার উদ্যোগ নেই। নিজের জমানো ১ লক্ষ ও মাসিক কিস্তিতে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তৈরী করি ধান ভাঙ্গানো মেশিন। এই মেশিনে ধান ভাঙ্গিয়ে যে অর্থ পাই তা দিয়ে সংসার চলছে ও ছেলেকে লেখাপড়া করাতে পারছি। সেই সাথে মেশিনের কাজে সহযোগী দুইজনের সংসারও ভালোই চলছে।