কাজিপুর সংবাদদাতা :
মহামারী করোনাভাইরাসে প্রতিরোধে চলছে লকডাউন। তাতে থেমে নেই কৃষকেরা। মাঠে হাসছে তাদের নানা জাতের ফসল। এরমধ্যে ভুট্টা কাটা মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষান-কৃষানীরা। তাদের আঙ্গিনায় শোভা পাচ্ছে হলুদ রঙের ভুট্টার মোচা। তা দেখে চাষীদের মুখে ফুটে উঠেছে স্বপ্ন পূরণের হাসি। কারণ এবার ভুট্টার বাম্পার ফলনের সাথে মিলছে কাঙ্খিত দামও।
সরেজমিন সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। উৎপাদন খরচের চেয়ে লাভ বেশি হওয়ায় বিগত বছরের তুলনায় এবার বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। তাছাড়া ভুট্টা মানুষের জন্য যেমন পুষ্টিকর তেমনই এটি এখন পোল্ট্রি ও মাছের খাবারসহ বিভিন্ন খাবারে যুক্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বছরে দুই মৌসুমে ভূট্টার আবাদ হয়ে থাকে। একটি রবি মৌসুম আর একটি গ্রীস্ম মৌসুম। নদীর চর, উঁচু, পরিত্যক্ত ও অনাবাদি জমিতে ভূট্টা চাষ হয়ে উঠেছে লাভজনক। ভূট্টা চাষে অতিরিক্ত শ্রম ও সেচের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভূট্টার রোগ বালাই প্রতিরোধের ক্ষমতাও রয়েছে বেশি। কম খরচে ভূট্টা চাষ করে কৃষক পাচ্ছেন অন্য ফসলের তুলনায় অধিক ফলন ও লাভ।
চরগিরিশ গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, ভূট্টা মাছ ও মুরগির খাবার হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। এ কারণে ভূট্টার চাহিদা বেশি। চাহিদা বেশি থাকায় বাজারে দামও ভাল পাওয়া যাচ্ছে। এ মৌসুমে ভূট্টার ফলন ভালো পাওয়া গেছে। বর্তমানে ভূট্টা প্রতি মণ ৫শ’ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ঘোড়াগাছা গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। ভুট্টা আবাদ করতে সেচ সার, বীজ, পরিচর্যা ও কীটনাশকসহ বিঘা প্রতি কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খবর হয়েছে। প্রতি বিঘায় ২৮ থেকে ৩০ মণ ফলন পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে তিনি খরচ বাদে অর্ধেক লাভ করেছেন।
চরনাটিপাড়া গ্রামের কৃষক রেজাউল করিম বলেন, ভূট্টা চাষে জমিতে পানি সেচ কম দিতে হয়। সেচ সুবিধার কারণে প্রতি বছর ধান আবাদের চেয়ে ভূট্টার আবাদ বেশি করি। আর ভূট্টা বাজারে ভাল দামে বিক্রি করার পরেও এর শুকনো গাছ ও মোচা বাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে থাকি।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, গত বছর ৭৫১৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছিল। এবার হয়েছে ৭৫২৫ হেক্টর জমিতে ভূট্্রা চাষ হয়েছে (৮৫০০ আবাদকৃত জমি)। ভূট্টা চাষে কৃষকদের সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়ায় আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পোলট্রি খাদ্য হিসেবে ভূট্টার রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। গো-খাদ্য এবং জ্বালানি হিসেবে ভূট্টাগাছ ও ছোবড়া বিক্রি করে অতিরিক্ত আয় করছেন কৃষক। বাজারে চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ায় কৃষক ভূট্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।